শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক//
সুদের মূল টাকার চেয়ে তিনগুন টাকা বেশি পরিশোধ করা সত্বেও আসল টাকার জন্য এক ব্যবসায়ীর পরিবারকে জোরপূর্বক বসতঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়ে দখল করে তালাবদ্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী দুই সুদি মহাজন। ফলে গত ছয়দিন ধরে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন ওই ব্যবসায়ী। বিঘিœত হচ্ছে ওই ব্যবসায়ীর সন্তানদের পড়াশুনা। ঘটনাটি জেলার ঐতিহ্যবাহী গৌরনদী পৌর এলাকার টরকী বন্দরের।
মঙ্গলবার দুপুরে ওই বন্দরের বাসিন্দা মৃত জালাল উদ্দিন মাঝির পুত্র ব্যবসায়ী আলী হোসেন মাঝি জানান, দীর্ঘদিন থেকে তিনি বন্দরের মাঝি পট্টির নিজ বাড়িতে স্ত্রী, এক পুত্র ও দুই কন্যাকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন। ব্যাবসার বিশেষ প্রয়োজনে তিনি গত ১৪ বছর পূর্বে টরকীরচর এলাকার সুদি মহাজন নান্নু খানের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে ১১ লাখ ও গত পাঁচ বছর পূর্বে বন্দরের সুদি কারবারী মাইনুল হাওলাদারের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা সুদে আনেন। এরমধ্যে নান্নু খানকে গত দশবছর ধরে প্রতিমাসে ৩১ হাজার পাঁচশ’ টাকা হিসেবে সুদের ৩৭ লাখ ৮০ হাজার এবং গত পাঁচ বছরে মাইনুল হাওলাদারকে প্রতিমাসে সুদের ১২ হাজার টাকা হিসেবে সাত লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়।
আলী হোসেন মাঝি আরও জানান, দুই সুদি মহাজন আসলসহ তার কাছে আরও ২৩ লাখ টাকা দাবি করে চাঁপ প্রয়োগ করতে থাকেন। উপায়অন্তুর না পেয়ে তিনি (আলী হোসেন) বিষয়টি বন্দর ব্যবসায়ী কমিটিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে জানিয়ে টাকা পরিশোধের জন্য সময় প্রার্থনা করেন।
আলী হোসেন বলেন, নেতৃবৃন্দর কাছে বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে উল্লেখিত দুই সুদি মহাজন তাদের লোকজন নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে আকস্মিকভাবে তার বাসায় এসে জোরপূর্বক কয়েকটি সাদাস্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায়ের পর এক পোষাকে ঘর থেকে স্ব-পরিবারে (স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের) বের করে গৃহের সকল মালামালসহ তালাবদ্ধ করে দিয়ে পুরো বাড়ি দখল করে নিয়েছে। সেই থেকে তারা একই উপজেলার বিল্বগ্রাম এলাকার নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
কান্নাজড়িতকন্ঠে আলী হোসেন মাঝি বলেন, আমার মেয়ে তৃনা আক্তার টরকী বন্দর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। চলমান টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য মঙ্গলবার সকালে সুদি মহাজনদের হাতে পায়ে ধরার পর তারা আমার বসত ঘরের তালাখুলে মেয়ের স্কুল ড্রেস ও বই বের করে দিয়ে পূর্ণরায় তালাবদ্ধ করে দিয়েছে।
টরকী বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ীরা বলেন, মূল টাকার চেয়ে সুদের হিসেবে তিনগুন বেশি টাকা পরিশোধ করার পরেও মূল টাকার জন্য সাদাস্টাম্পে স্বাক্ষর আদায় করে ব্যবসায়ীর স্ব-পরিবারকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে তালাবদ্ধ করে দখল করার বিষয়টি অমানবিক। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত সুদি মহাজনদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলেও তারা ফোন রিসিফ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ মুনিরুজ্জামান মুনির বলেন, বিষয়টি আমার জানাছিলো না। এ ঘটনায় এখনও থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply